অশুভ শক্তির বিনাশ হোক
- আপলোড সময় : ০৪-১০-২০২৫ ০৮:৪০:৪৪ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ০৪-১০-২০২৫ ০৮:৪০:৪৪ পূর্বাহ্ন

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস অনুযায়ী, প্রতি শরতে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দেবী দুর্গা কৈলাস ছেড়ে নেমে আসেন মর্ত্য।ে ছেলেমেয়েকে নিয়ে নির্দিষ্ট তিথি পর্যন্ত বাবার বাড়িতে অবস্থান শেষে আবার ফিরে যান দেবালয়ে। দেবীর এই আগমন-পথযাত্রা কেবল ধর্মীয় আচার নয়, এটি ভক্তদের আত্মিক আনন্দ ও সামাজিক উৎসবেরও অনন্য উপলক্ষ।
অসুরদের দলপতি মহিষাসুর বধের মধ্য দিয়ে দেবী দুর্গা যেমন দেবতাদের রক্ষা করেছিলেন, তেমনি তিনি মানবসমাজকে শিখিয়ে দেন- অন্যায় ও অশুভ শক্তি যতই প্রবল হোক না কেন, শেষ পর্যন্ত ন্যায় ও শুভ শক্তিরই জয় হয়। মানুষের মনের অন্ধকার দূর করে তিনি জাগিয়ে তোলেন মহত্ত¡, নিশ্চিত করেন কল্যাণ।
মহালয়ার কাকভোরে পূর্বপুরুষদের তর্পণের মাধ্যমে বেজে ওঠা আগমনী সুর থেকেই শুরু হয় দুর্গাপূজার ক্ষণগণনা। ষষ্ঠীর বোধনের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিক সূচনা ঘটে, আর বৃহস্পতিবার বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে পাঁচ দিনব্যাপী এই মহাউৎসব। দেবী বিদায় নিলেও ভক্তের মনে থেকে যায় সত্য, শুভ ও ন্যায়ের চিরন্তন শিক্ষা।
শাস্ত্রমতে দেবীর আগমন ও গমন বাহনের ওপর নির্ভর করে শুভ-অশুভ বার্তা। এ বছর এবার জগতের মঙ্গল কামনায় দেবী দুর্গা গজে (হাতি) চড়ে স্বর্গালোক থেকে মর্ত্যলোকে (পৃথিবী) আসেন; যার ফল হিসেবে বসুন্ধরা শস্যপূর্ণা হয়ে উঠবে। দেবী স্বর্গালোকে বিদায় (গমন) নিয়েছেন দোলায় (পালকি) চড়ে; যার ফল হচ্ছে মড়ক। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, রোগ ও মহামারির প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাবে।
দুর্গাপূজা শুধু হিন্দু সম্প্রদায়ের উৎসব নয়, এটি আসলে বাঙালির এক মহাসাংস্কৃতিক মিলনোৎসব। হাজার বছর ধরে এই ভূখন্ড মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, চাকমা, সাঁওতালসহ নানা ধর্ম ও জাতিগোষ্ঠীর মানুষ মিলেমিশে বসবাস করছে। পারস্পরিক সম্প্রীতি, মিলন ও সহাবস্থানই করেছে বাঙালি সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী। দুর্গোৎসব তার উজ্জ্বলতম প্রতীক, যেখানে ধর্মীয় আচার ছাড়াও মানুষে-মানুষে সৌহার্দ্য ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার অঙ্গীকার প্রতিফলিত হয়।
আজ যখন পৃথিবীর নানা প্রান্তে সাম্প্রদায়িকতা ও বিভেদের বিষবাষ্প ছড়াচ্ছে, তখন আমাদের প্রত্যাশা- বাংলাদেশ থাকবে সম্প্রীতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে। সব সংকীর্ণতা, হিংসা ও বিভাজন চিরতরে মুছে গিয়ে সত্য, শুভ ও ন্যায়ের শক্তি জয়লাভ করুক। দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গার শিক্ষাই হলো- অশুভ শক্তিকে পরাজিত করে মানবমনের শুচিতা ও মহত্ত¡কে জাগ্রত রাখা। এই শিক্ষাই আমাদের পথের দিশারি হোক। সবার জীবনে আসুক শান্তি ও কল্যাণ। অশুভ শক্তির বিনাশ হোক। শুভ বিজয়া।
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ